Information

কুরবানীর ভাগের নিয়ম

Rate this post

কুরবানীর ভাগের নিয়ম: আপনি কি কুরবানীর ভাগের নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে আপনি সঠিক ওয়েবসাইটেই এসেছেন। আজকের এই পোস্টে আমরা কুরবানীর ভাগের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে সেইসব তথ্য দিয়ে থাকি, যা দৈনন্দিন জীবনে মানুষের উপকারে আসে। আশা করি আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি আপনার কাঙ্খিত বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আমরা সবসময় চেষ্টা করি, প্রতিটি বিষয় ধাপে ধাপে উপস্থাপন করার, তো চলুন শুরু করা যাক।

কুরবানীর ভাগের নিয়ম

আজকে আমরা যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব তা হলো: কুরবানীর ভাগের নিয়ম ।  আপনারা এই পোস্টে বিস্তারিত সকল তথ্য পেয়ে যাবেন

কুরবানী ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। এটি এমন এক ইবাদত যার সূচনা হযরত আদম (আঃ) থেকে হয়েছে। আল-কুরআনুল কারীমের সূরা মায়েদার ২৭ নম্বর আয়াতে হযরত আদম আঃ এর দুই পুত্রের কুরবানী করার ঘটনা দ্বারা এর প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রত্যেক নবীর যুগেই কুরবানী ছিল। তবে তার পদ্ধতি ও ধরণ এক ছিল না । কুরবানী করা সামর্থবান মুসলমানের উপর ওয়াজিব।

কুরবানিদাতা তার নিজের পাওয়া গোশত ৩ ভাগ করে-

  1. নিজেদের জন্য রাখবে তথা আহার করবে।
  2. আত্মীয়-স্বজনদের এক ভাগ দেবে।
  3. যারা অভাবি বা গরিব তাদের এক ভাগ দেবে।

না! কোনভাবেই কুরবানীর গোস্ত বিক্রি জায়েজ নেই। বরং গরু কাটা-ছিড়ার ক্ষেত্রে কসাইকেও  মজুরী হিসেবে গোস্ত দেওয়া জায়েজ নেই। হযরত আলী রা: বলেন:

عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ : أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ أَقُومَ عَلَى بُدْنِهِ ، وَأَنْ أَتَصَدَّقَ بِلَحْمِهَا وَجُلُودِهَا وَأَجِلَّتِهَا ، وَأَنْ لَا أُعْطِيَ الْجَزَّارَ مِنْهَا

“ হযরত আলী রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম স: আমাকে তার কুরবানীর উটের দায়িত্ব দিয়ে আমাকে আদেশ দেন যে, আমি যেন তার গোস্ত, চামড়া ও হাড্ডি সবকিছূ সদকা করে দেই। এবং তা থেকে যেন (কসাইকে) মজুরী না দেই। (মুসলিম:২৪০৭)

উত্তর: কুরবানী গোস্ত বন্টনের বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন:

فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ

“ তোমাদের জবাইকৃত পশু থেকে তোমরা নিজেরা খাও ও গরীব-দুস্থদের খেতে দাও।” ( সূরা হজ্জ:২৮)

এখানে গরীব-দুস্থদের মাঝে কুরবানীর গোস্ত বিতরণ ও খাওয়ানোর কথা বলা হয়েছে কিন্তু  তা তিনভাগের বিষয় বলা হয়নি।

কুরবানীর গোস্ত বন্টনের ব্যাপরে ইবনে আব্বাস রা: থেকে একটি পেশ করা হয়। তা হলো: রাসূল স: কুরবানীর গোস্তের ভাগ নির্ধারণ করে দিয়ে বলেন:

يُطعِمُ أهلَ بيتِه الثُّلثَ، ويُطعِمُ فقراءَ جيرانِه الثُّلُثَ، ويَتصدَّقُ على السؤَّالِ بالثُّلثِ“

তোমরা (কুরবানীর  গোস্ত) তিনভাগের একভাগ পরিবারকে খাওয়াও, অপর তিনভাগের একভাগ নিকটস্থ গরীব প্রতিবেশীদের খাওয়াও, অপর তিনভাগের একভাগ ফকির-মিসকিনদের খাওয়াও। (কাশফুল কানায়ী: ৩/২২)। ইবনে উমরা রা: থেকে অনুরুপ হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

কিন্ত এই হাদিসটির হুকুম পরবর্তিতে অন্য একটি হাদিস দ্বারা রহিত হয়। যেমন রাসূল স: বলেন:

كنت نهيتكم عن لحوم الأضاحي فوق ثلاث ليتسع ذو الطول على من لا طول له فكلوا ما بدا لكم وأطعموا وادخروا

 “ আমি তোমাদেরকে কুরবানীর গোস্ত তিনদিনের বেশি রাখার ব্যাপারে নিষেধ করেছিলাম। আর তখন ছিল অত্যন্ত দুর্বিক্ষের সময়। সুতরাং এখন তোমাদের যা ইচ্ছা হয় খাও অন্যদেরও খাওয়াও এবং জমা করে রাখ। (তিরমিজি: ১৪৩০)। এই হাদিসের উপর রাসূল স: এর সময় থেকে সাহাবায়েকেরাম ও তাবেতাবেয়ীগণ আমল করেছেন। এই হাদিসের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে যে, গোস্ত বন্টন ও তা জমা করার ক্ষেত্রে ব্যাক্তির স্বাধীনতা রয়েছে। তবে আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূল (স:) অভাবী ও দূস্থদের মাঝে কুরবানীর গোস্ত বিতরে উৎসাহ দান করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْقَانِعَ وَالْمُعْتَرَّ

“অতপর তোমরা তা থেকে খাও। যে অভাবী, মানুষের কাছে হাত পাতে না এবং যে অভাবী চেয়ে বেড়ায়- তাদেরকে দাও। (সূরা হজ্জ:৩৬)

কোরবানির গোশত যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে খাওয়া যাবে। ‘কোরবানির গোশত তিন দিনের বেশি সংরক্ষণ করা যাবে না বলে মুসলিম শরিফে আলি  থেকে যে হাদিস খানা বর্ণিত হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে রাসুলুল্লাহ  তোমাদের কে কুরবানীর গোশত তিন দিনের বেশি সময় ধরে ভক্ষণ করতে নিষেধ করেছেন এই হাদিস এর হুকুম রহিত হয়ে গেছে। কেননা অপর হাদিসে সালমা ইবনে আকওয়া  থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, ﺍﻮُﻠُﻛ ﺍﻭُﺮِﺧَّﺩﺍَﻭ ﺍﻮُﻤِﻌْﻃَﺃَﻭ তোমরা নিজেরা খাও ও অন্যকে আহার করাও এবং সংরক্ষণ কর। তাই যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়। বোখারী ১/২৭৩, হাদিস ৫১৪৩, মুসনাদু আহমদ ২৩/১৬৩, হাদিস ১১১১৪, মিশকাতুল মাছাবিহ ২/৯৫, হাদিস ২৭৪৪।

কোরবানির মাংস তিনভাগে ভাগ করে এর একভাগ গরীব ও ইয়াতিম-মিসকিনদের দান করা, একভাগ আত্মীয়-স্বজনকে দেয়া এবং অন্য ভাগ নিজে রাখা মুস্তাহাব। তবে ইচ্ছা করলে আপনি পুরো মাংসই খেতে পারেন এতে দোষের কিছু হবেনা। কোরবানির পশু যবেহকারী ও মাংস প্রস্তুতকারীকে কোরবানির পশুর মাংস থেকে পারিশ্রমিক স্বরূপ দেয়া যাবে না।

চামড়া: কোরবানির পশুর চামড়া, রশি ও ফুলের মালা প্রভৃতি সদকা করে দিতে হবে। চামড়া নিজের ব্যবহারের জন্য রাখতে চাইলে রাখতে পারবে, যেমন- জায়নামায, বিছানা, ইত্যাদি বানাতে পারবে। কিন্তু কোরবানির চামড়া বিক্রি করে এর মূল্য নিজ কর্মে ব্যয় করতে পারবে না।

অধিকাংশ ইসলামিক স্কলারদের মতে, কুরবানির পশুর গোশতকে এ তিন ভাগে ভাগ করা মুস্তাহাব এবং উত্তম বলেছেন।

কুরবানির গোশত খাওয়া ও অন্যকে দেয়া সম্পর্কে কুরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
– যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে আর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ করার সময়। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুস্থ-অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।‘ (সুরা হজ : ২৮)

– অতঃপর যখন তারা কাঁত হয়ে পড়ে যায় তখন তা থেকে তোমরা আহার কর এবং আহার করাও যে কিছু চায় তাকে আর যে চায় না তাকেও।’ (সুরা হজ : আয়াত ৩৬)

কুরবানীর গোস্ত অমুসলিমদের দেয়া যাবে কি?

উত্তর: হ্যাঁ।অমুসলিমদের গোস্ত দেওয়া যাবে।

 

আপনি যদি এ ধরনের তথ্যমূলক পোস্ট জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। আপনার একটি মন্তব্য আমাদের অনেক উৎসাহ দেয়। আশা করি আপনারা আজকের পোস্ট: কুরবানীর ভাগের নিয়ম পড়ে পুরো বিষয়টি জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। ধন্যবাদ আমাদের ওয়েবসাইটি ভিজিট করার জন্য!

Back to top button