বৌদ্ধ উত্তরাধিকার আইন

বাংলাদেশ উত্তরাধিকার আইন

দেশ বিভাগের পর ১৯৫০ সালে জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন প্রবর্তনের ফলে এদেশের কৃষকরা পুনরায় জমির মালিকানা ফিরে পায়। ১৭৯৩ সালের পরবর্তী সময়ে দেশে বিভিন্ন স্বদেশী আন্দোলন ও কৃষকদের বিক্ষোভের মুখে বিভিন্ন আইন করা হলেও ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন দ্বারা কৃষকদের ভূমির সীমিত অধিকার প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হওয়ার ফলে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ হয় এবং কৃষকেরা পুনরায় জমির মালিকানা ফিরে পায় ।

উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি অর্জন –

কোন মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির বন্টনযোগ্য অংশ মৃত ব্যক্তির ধর্মীয় ব্যক্তিগত আইন দ্বারা পরিচালিত হবে। আমাদের দেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য “মুসলিম উত্তরাধিকার আইন” হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য “হিন্দু উত্তরাধিকার আইন” খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য “খ্রিস্টান উত্তরাধিকার আইন” দ্বারা উত্তরাধিকার নির্ধারিত হয়।

বৌদ্ধ উত্তরাধিকার আইন

বাংলাদেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সাধারণত হিন্দু দায়ভাগ আইন অনুসরণ করে সম্পত্তি বন্টন করেন। কিন্তু চাকমা, ত্রিপুরা, দেওয়ান, খীসা, তঞ্চঙ্গা ইত্যাদি পদবির আদিবাসীরা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হলেও দায়ভাগ আইনের সংগে তাদের সামাজিক কিছু প্রথা অন্তর্ভুক্ত করে ।উত্তরাধিকার আইন

প্রাচীন প্রথা ও নিয়মকানুনও তাদের উত্তরাধিকার নির্ধারণে ভূমিকা প্রাখে। তাদের সমাজ সাধারণত পুরুষ প্রধান। প্রাচীনকালের প্রথা বা সুদাম অনুসারে যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তির চিতায় আগুন দিত এবং পরদিন সকালে জল ঢেলে চিতার স্থান পরিষ্কার করে দেহাছি নদীর জলে বিসর্জন দিত তাকেই মৃত ব্যক্তির ত্যাজ্যবৃত্তের উত্তরাধিকার নির্ধারণ করা হতো। এ পদ্ধতি বর্তমানে চালু না থাকলেও রাজার অভিমত, বিভিন্ন বিচারের রায়, দান, উইল ইত্যাদি উত্তরাধিকার নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। উত্তরাধিকার নির্ধারণে নিম্নলিখিত পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ঃ

১। জাতীয় প্রথা বা ‘সুদাম’ অনুসারে মৃত ব্যক্তির ত্যাজ্য সম্পত্তিতে শুধু পুত্র সন্তান নেই উত্তরাধিকার হয়। একাধিক পুত্র সন্তান থাকলে সকলে সমান অংশে মালিক হবে। তবে কন্যাগণ ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারিণী।

২। মৃত ব্যক্তির একাধিক স্ত্রীর গর্ভজাত পুত্রের সংখ্যা যাহাই হউক না কেন, সকলে সমান অংশে উত্তরাধিকার হবে।

৩। পিতার মৃত্যুর পূর্বে কোন পুত্রের মৃত্যু হলে তার পুত্র সন্তানগণ দাদার সম্পত্তিতে পিতার প্রাপ্য অংশে অংশীদার হবে।

৪। পিতার জীবদ্দশায় কোন পুত্র পৃথক পরিবারে বসবাস করলেও পিতার মৃত্যুর পর তার প্রাপ্য অংশে অন্যান্য ভাইদের সঙ্গে সমপরিমাণে উত্তরাধিকার হবে।

৫। রুগ্ন, উন্মাদ, শারীরিক অক্ষম পুত্রও পৈত্রিক সম্পত্তির উত্তরাধিকার থাকবে।

৬ । জাতীয় প্রথা অনুসারে বিধবা স্ত্রী স্বামীর ত্যাজ্য বিত্তের কোন অংশ পায় না। তবে আজীবন তথা দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ না করা পর্যন্ত শুধু ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারিণী হয়। মৃত ব্যক্তি নিঃসন্তান হলে বা স্ত্রীগণ সমভাবে স্বামীর উত্তরাধিকার থাকবেন ।

৭। মৃত ব্যক্তির পুত্র সন্তান না থাকলে কন্যা বা কন্যাগণ পৈত্রিক সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারিত্ব লাভ করে।

৮। নিঃসন্তান অবস্থায় কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর কোন বৈধ সন্তান ভূমিষ্ট হলে সে সন্তান (পুত্র বা কন্যা যাই হউক) পৈত্রিক সম্পত্তির উত্তরাধিকার হয়। একাধিক স্ত্রীর একাধিক বা জমজ সন্তান হলে শুধু পুত্র সন্তান বা পুত্র সন্তানগণ পৈত্রিক সম্পত্তির উত্তরাধিকার হয়ে থাকে। শুধু এক বা একাধিক কন্যা সন্তান হলে সমঅংশে পৈত্রিক সম্পত্তির উত্তরাধিকারিণী হয়ে থাকে।

৯। মৃত ব্যক্তি অবিবাহিত হলে মৃতের সহোদর ভ্রাতা ত্যাজ্য বিত্তের উত্তরাধিকার হয়ে থাকে ।

১০। পিতা-মাতা, সহোদর ভাই না থাকলে অবিবাহিত মৃত ব্যক্তির যাবতীয় স্বত্বে তার সহোদর বোন উত্তরাধিকার হবে।

১১ । অবৈধ সন্তান উত্তরাধিকার হয় না ।

১২। ত্যাজ্য পুত্র পৈত্রিক সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার হয় না।

১৩। মৃত ব্যক্তি মহিলা হলে তার গর্ভজাত সন্তান উত্তরাধিকার হয় । পুত্র সন্তান না থাকলে কন্যা সন্তান ওয়ারিশ হয়।

১৪। চাকমা রাজপরিবারে সাধারণত রাজার জ্যেষ্ঠ পুত্রই রাজপদসহ যাবতীয় স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির উত্তরাধিকার হয়। কোন রাজা কন্যা সন্তান রেখে মারা গেলে তার গর্ভজাত জ্যেষ্ঠ পুত্র দৌহিত্রসূত্রে চাকমা রাজপদ পেয়ে থাকেন।

image

Scroll to Top