খতিয়ান কি – খতিয়ান অনুসন্ধান

খতিয়ান

তিয়ানের অর্থ হল ‘হিসাব’। সাধারণভাবে স্বত্ব সংরক্ষণ ও রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে জরীপ বিভাগ কর্তৃক প্রত্যেক মৌজার ভূমির মালিক বা মালিকগণের নাম, পিতা অথবা স্বামীর নাম, ঠিকানা, হিস্যা (অংশ) এবং তাদের স্বত্ত্বাধীন দাগসমূহের নম্বরসহ ভূমির পরিমাণ, শ্রেণী, এদের জন্য দেয় খাজনা ইত্যাদি বিবরণ সহ ক্রমিক সংখ্যা অনুসারে যে স্বত্ব তালিকা বা স্বত্ত্বের রেকর্ড প্রস্তুত করা হয় তাদের প্রত্যেকটিকে খতিয়ান বলা হয় এবং উক্ত রেকর্ডকে স্বত্ত্বের রেকর্ড বা রেকর্ড অব রাইট্স (ROR) বলা হয় ।

এক বা একাধিক দাগের সম্পূর্ণ বা আংশিক পরিমাণ ভূমি নিয়ে এক বা একাধিক ব্যক্তির নামে স্মরণীর বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যে ভূমি স্বত্ব প্রস্তুত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে।

খতিয়ানগুলো ১, ২, ৩, ৪, ৫ ইত্যাদি ক্রমিক সংখ্যা দ্বারা সাজানো হয়ে থাকে। প্রত্যেক খতিয়ানে একটি সংখ্যা রয়েছে। ইহাদেরকে খতিয়ান নম্বর বলা হয়। প্রত্যেক মৌজার খতিয়ান ১(এক) হতে শুরু হয় । কোন কোন মৌজার (একশত) ১০০ খতিয়ানের কম থাকতে পারে আবার কোন কোন মৌজার কয়েক হাজারের বেশি থাকতে পারে । কোন মৌজার কতটি খতিয়ান রয়েছে তা উক্ত স্বত্বের রেকর্ড (ROR) পাওয়া যাবে।

খতিয়ানের প্রকার :

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৪ ধরনের খতিয়ান রয়েছে। যথা-

  • (১) সি, এস খতিয়ান,
  • (২) এস, এ খতিয়ান,
  • (৩) আর এস খতিয়ান,
  • (৪) বি, এস খতিয়ান/সিটি জরিপ

নিচে ৪ প্রকার খতিয়ানের বর্ণনা দেওয়া হইল :

(১) সি, এস খতিয়ান : বিট্রিশ শাসনামলে ১৯৪০ সালে সরকার জরিপের মাধ্যমে যে খতিয়ান প্রস্তুত করেন তাকে সি, এস খতিয়ান বলে ।

(২) এস, এ খতিয়ান : ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ২৭ হতে ৩১ ধারা অনুযায়ী ১৯৫৬-৬০ সালে যে খতিয়ান প্রস্তুত করা হয় তাকে এস, এ (State Acquision) খতিয়ান বলে । image

(নমুনা চিত্র)

(৩) আর, এস খতিয়ান : এই আইনের ১৪৪ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার খতিয়ান প্রস্তুত করার উদ্যোগ নেন এরূপ খতিয়ানকে বলা হয়। আর, এস (Renisional Survey) খতিয়ান । image

( নমুনা চিত্র)

(৪) বি, এস খতিয়ান / সিটিজরিপ : ১৯৯৮-৯৯ সাল হতে বর্তমানে চলমান জরিপকে বি, এস খতিয়ান বা সিটি জরিপ বলে। যাহা এখনো চলমান।image

( নমুনা চিত্র)

খতিয়ানের ধরন

খতিয়ান সাধারণত দুই ধরনের হয়- জরিপ খতিয়ান ও মিউটেশন খতিয়ান ।

(ক) জরিপ খতিয়ান : পূর্বের বর্ণনা অনুযায়ী জরিপ বিভাগ জরিপকালে যে খতিয়ান প্রস্তুত করে তাকে জরিপ খতিয়ান বলে। জরিপ খতিয়ানের পাতাগুলো ১০০- ২০০টি করে বাঁধাই করে একটি করে বহি প্রস্তুত করা হয়। তাকে ১ নং রেজিস্টার বা জমাবন্দি রেজিস্টার বলে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেকর্ড রুমে, জেলা জজ আদালতে, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে (তহশীল অফিস) ১ নং রেজিস্টার বা জরিপ খতিয়ান সংরক্ষিত থাকে।

(খ) মিউটেশন খতিয়ান : সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিউটেশনের মাধ্যমে যে খতিয়ান প্রস্তুত করে তাকে মিউটেশন খতিয়ান বলে। চতুর্থ অধ্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

সকল ধরণের আপত্তি ও আপিল নিষ্পত্তি করা হলে রাজস্ব কর্মকর্তা চূড়ান্তরূপে খতিয়ান প্রকাশ করবেন । রাষ্ট্রীয় অর্জন বিধিমালা ২৫ নম্বর বিধিতে বলা হয়েছে যে, রাজস্ব কর্মকর্তা চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত খতিয়ান বিনামূল্যে পরিদর্শনের জন্য সুবিধাজনক স্থানে কিছু দিনের জন্য উন্মুক্ত রাখবেন ।

রাজস্ব কর্মকর্তা চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত খতিয়ান ও তারিখ বর্ণনা করে সার্টিফিকেট প্রদান করেন যা খতিয়ানের চূড়ান্ত সাক্ষ্যরূপে পরিগণিত হবে।

Scroll to Top