বাংলাদেশ উত্তরাধিকার আইন
দেশ বিভাগের পর ১৯৫০ সালে জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন প্রবর্তনের ফলে এদেশের কৃষকরা পুনরায় জমির মালিকানা ফিরে পায়। ১৭৯৩ সালের পরবর্তী সময়ে দেশে বিভিন্ন স্বদেশী আন্দোলন ও কৃষকদের বিক্ষোভের মুখে বিভিন্ন আইন করা হলেও ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন দ্বারা কৃষকদের ভূমির সীমিত অধিকার প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হওয়ার ফলে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ হয় এবং কৃষকেরা পুনরায় জমির মালিকানা ফিরে পায় ।
একজন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান নিম্নোক্তভাবে সম্পত্তি অর্জন করে :
ক ) উত্তরাধিকার সূত্রে (ব্যক্তিগত ধর্মীয় আইন দ্বারা পরিচালিত)।
খ) ক্রয়-বিক্রয় সূত্রে ( সম্পত্তি হস্তান্তর আইন-১৮৮২ ও ভূমি রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর বিধান অনুসারে)।
গ) আদালতের রায়ের মাধ্যমে।
ঘ) অন্যান্যভাবে হস্তান্তরিত (ব্যক্তিগত ধর্মীয় আইন ও সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ এর বিধান অনুসারে) : যেমনঃ
১। লীজ/ ইজারা
২। বিনিময় (of Exchanges)
৩। দান (Gift)
৪। উইল (Will)
৫ । হেবা-বিল এওয়াজ (Heba-Bill-Ewaz)
৬। ওয়াকফ (Wakf)
৭। দেবোত্তর সম্পত্তি
উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি অর্জন –
কোন মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির বন্টনযোগ্য অংশ মৃত ব্যক্তির ধর্মীয় ব্যক্তিগত আইন দ্বারা পরিচালিত হবে। আমাদের দেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য “মুসলিম উত্তরাধিকার আইন” হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য “হিন্দু উত্তরাধিকার আইন” খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য “খ্রিস্টান উত্তরাধিকার আইন” দ্বারা উত্তরাধিকার নির্ধারিত হয়।
(১) মুসলিম উত্তরাধিকার আইন :
ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি এবং আত্মসমর্পণ। আল্লাহর ইচ্ছার উপর আত্মসমর্পণ ইসলাম এবং পৃথিবীতে শান্তি স্থাপনই ইসলামের লক্ষ্য। আরবি আসসালামা শব্দ থেকে ইসলাম ও মুসলিম শব্দের উৎপত্তি। ইসলামের বাণীতে বিশ্বাসী ব্যক্তি মুসলমান।
মুসলিম আইনের উৎস্য মুসলিম আইনের উৎস হলোঃ
(ক) কোরআন : সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী ও রাসুল হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর নাজিলকৃত আল্লাহর বাণী বা ওহীর সমষ্টিই আল-কোরআন। আল-কোরআনে মোট ৬,৬৬৬ টি আয়াত এবং ১১৪টি সুরা আছে। সূরাসমূহ মক্কী ও মাদানী নামে দুই ভাগে বিভক্ত। মাদানী সূরাসমূহে ইসলামী উত্তরাধিকার আইন-এর নির্দেশাবলি ও উপদেশ বর্ণিত মুসলিম উত্তরাধিকার আইনের মূল উৎস্য হচ্ছে আল কোরআন।
(খ) সুন্নাহ্ : সুন্নাহ শব্দের অর্থ হচ্ছে অনুসৃত পথ। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর মুখ নিঃসৃত বাণী অর্থাৎ, তাঁর কথা, কর্ম ও তাঁর সম্মুখে কৃত কোন কর্মের মৌন সম্মতিই হচ্ছে সুন্নাহ। সুন্নাহসমূহের পরিভাষাগত অর্থ হচ্ছে হাদিস। আরবিতে পূর্ব বর্ণিততিনটি বিষয়কে হাদিস কওলী, ফেনী ও তাকরীরি বলা হয়। রাসুল (সাঃ)-এর তিরোধানের পর হাদিস সংকলন করা হয়। বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থের সংখ্যা ৬ টি—বুখারী শরিফ, মুসলিম শরিফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজা শরীফ, নাসায়ী শরিফ ও আবু দাউদ শরীফ। তাদেরকে একত্রে সিয়া সিত্তাহ বলা হয় ।
(গ) ইজমা : ইসলামী চিন্তাবিদ ও দার্শনিকগণ কোন সময়ে কোন বিষয়ে একমত পোষণ করলে বা একমত হয়ে কোন সমস্যা সমাধানে উপনীত হলে তাকে ইজমা বলে। অর্থাৎ কোন বিষয়ে কোরআন ও হাদিসের পর কোন সমস্যা সমাধানে ইজমার সাহায্য গ্রহণ করা যায় ।
(ঘ) কিয়াস : কিয়াস অর্থ হচ্ছে আংশিক একমত হওয়া বা যুক্তিসংগত অনুমান করা। কোরআন, হাদিস, ইজমার পর কোন সমস্যার সমাধানে কিয়াসের সাহায্য গ্রহণ করা হয়।
বন্টনযোগ্য সম্পত্তিঃ
কোন মুসলমানের মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে (ক) দাফন-কাফন ও মৃত্যুশয্যাকালীন খরচ (খ) মৃত্যুর তিন মাস পূর্ব পর্যন্ত সময়ের সেবা-শুশ্রূষার খরচ (গ) ঋণ এবং (ঘ) উইল বা উইলের খরচ (ঙ) প্রবেট বা সাকসেশন সার্টিফিকেট সংক্রান্ত ব্যয় পরিশোধের পর যে সম্পদ থাকে তা মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী ওয়ারিশগণের মধ্যে বন্টিত হবে।
মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী ওয়ারিশ :
মুসলিম আইন অনুযায়ী ওয়ারিশ বা উত্তারাধিকার তিন শ্রেণীতে বিভক্তঃ
ক) শেয়ার বা অংশীদার (যাবিল ফুরুজ) : কোরআনে যাদের অধিকার নির্ধারিত করে দেওয়া আছে, যেমন—কন্যা, মা, বাবা, দাদা, দাদী, স্বামী/স্ত্রী ইত্যাদি।
অংশীদার কে কেঃ
১২ জন অংশীদার রয়েছে তারা হচ্ছেঃ ১. পিতা, ২. স্বামী, ৩. স্ত্রী, ৪. মাতা, ৫. কন্যা, ৬. দাদা, ৭. দাদী, ৮. ছেলের কন্যা, ৯. বৈপিত্রের ভাই, ১০. বৈপিত্রের বোন, ১১. বোন, ১২. বৈমাত্রের বোন। এদের মধ্যে প্রথম ৫ জন সকল সময়ই সম্পত্তি পাবে, তারা প্রাথমিক উত্তরাধিকারী, পরবর্ত তিনজন (৬-৮) পূর্ববর্তী ৫ জনের বিকল্প। সর্বশেষ চারজন (৯-১২) সন্তান ও পিতা থাকলে সম্পত্তি পাবে না (অংশীদারদের তালিকায়)। প্রথম একজনের সম্পত্তি পাবার বিষয়ে পবিত্র কোরআন শরীফ সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে। ইসলামী চিন্তাবিগণ কোরআন ও হাদিস পর্যলোচনাপূর্বক ফিকাস নীতি অনুসরণ করে তাদের তিনজনকে স্বীকৃতি দিয়েছেন ।

খ) রেসিডুয়ারী বা পরিত্যক্ত অংশভোগী (আসাবা) : যারা নির্ধারিত কোন অংশ | সকল সময় পায় না, অংশীদারদের নির্ধারিত অংশ দেওয়ার পর বাকি সম্পত্তি রেসিডুয়ারিগণ পেয়ে থাকে। যেমন— পুত্র, ভাই, চাচাত ভাই, ভাইয়ের পুত্র ইত্যাদি ।
রেসিডুয়ারী কারাঃ
ক) সকল রেসিডুয়ারী মৃতের সাথে পুরুষ আত্মীয়ের মাধ্যমে সম্পর্কযুক্ত। রেসিডুয়ারিগণকে তিনভাগে ভাগ করা হয়। যথা –
১. নিজের অধিকার (রেসিডুয়ারী তালিকাভুক্ত সকলে )
২. অন্যের কারণে – (৪ জন মহিলা অন্যের বর্তমানে রেসিডুয়ারী হিসাবে সম্পত্তি পায়; পুত্রের বর্তমানে কন্যা, পুত্রের পুত্র-এর বর্তমানে পুত্রের কন্যা, ভাইয়ের বর্তমানে বোন, বৈমাত্রেয় ভাইয়ের বর্তমানে বৈমাত্রেয় বোন)
৩. অন্যের সাথে– যখন মৃতের বোন এবং বৈমাত্রেয় বোন, মৃতের কন্যা এবংপুত্রের কন্যার সাথে বর্তমান থাকে।
খ) উত্তরাধিকারের ক্রমানুসারে রেসিডুয়ারিগণকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন—১. বংশধর, ২. মৃতের ঊর্ধ্ববর্তী বংশধর, ৩. মৃতের পিতার নিম্নবর্তী
গ) ৬ জন অংশীদার ক্ষেত্রবিশেষে রেসিডুয়ারী হিসাবে অংশ পেয়ে থাকেন। তারা হচ্ছেন—পিতা, দাদা, কন্যা, পুত্রের কন্যা, বোন, বৈমাত্রেয় বোন। পিতা ও দাদা কোন কোন সময় অংশীদার ও রেসিডয়ারী উভয় অধিকারে সম্পত্তি পেয়ে থাকে।

গ) দূর সম্পর্কের আত্মীয় (যাবিল আরহাম)ঃ যদি কোন অংশীদার বা রেসিডুয়ারী না থাকে তবে দূর সম্পর্কের আত্মীয়রা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি পাবে। অংশীদার বা পরিত্যক্ত অংশভোগী নয় অথচ রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়, যেমন—ভাগ্নি, ভাতিজি, চাচাত বোন ইত্যাদি দূর সম্পর্কের আত্মীয়। দূর সম্পর্কের আত্মীয়রা নিম্নরূপ, যথা—
হিন্দু উত্তরাধিকার আইন
হিন্দু আইন হিন্দুদের ব্যক্তিগত আইন। আইন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায়ও এর প্রয়োগ রয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসন আমলে ফৌজদারি বিষয়সমূহ প্রচলিত মুসলিম আইনের অনুশাসন অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হলেও দেওয়ানী বিষয়াদিতে হিন্দুদের ব্যক্তিগত প্রথা বা আইনকে স্বীকৃতি প্রদান করা হতো।
হিন্দু আইনের মূল উৎস :
হিন্দু আইনের মূল উৎস ৪টি (ক) বেদ বা শ্রুতি, (খ) স্মৃতি, (গ) ব্যাখ্যা বা নিবন্ধ, (ঘ) প্রথা।
(ক) বেদ বা শ্ৰুতিঃ অতি প্রাচীনকালে দেবতাগণ প্রত্যক্ষভাবে যা বলেছিলেন ও তৎকালে মুনিগণ যা শুনেছিলেন এবং পরবর্তীকালে যা মুনিবর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন কর্তৃক সংকলিত হয় তাই বেদ। ঋক বেদ, যজু বেদ, সাম বেদ ও অথর্ব বেদ এই চারটি বেদকে একত্রে শ্রুতিশাস্ত্র বলা হয়। বেদ হচ্ছে হিন্দুধর্মের মূল ভিত্তি।
(খ) স্মৃতিঃ প্রাচীনকালে মানুষের পালনীয় ঐশ্বরিক নির্দেশাবলি যা আর্য ঋষিগণ গুরু শিষ্য পরম্পরায় আবৃত্তি আকারে স্মরণে রেখেছিলেন, যা পরবর্তীকালে মুনিগণ গ্রন্থ আকারে সংকলিত করেন ইহাই স্মৃতি শাস্ত্ৰ বা সংহিতা নামে পরিচিত।
(গ) ব্যাখ্যা বা নিবন্ধঃ ধর্মীয় অনুশাসনে বিভিন্ন স্মৃতির মধ্যে জটিলতা দেখা দিলে ব্যাখ্যার উদ্ভব হয়। আঞ্চলিক রীতিনীতির সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করে পণ্ডিতগণ নিজেদের মতামত বা ব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে প্রাচীন আইনের সংশোধন করে থাকেন। ব্যাখ্যাসমূহের মধ্যে দুটি মতবাদই অনুসরণ করা হয়ে থাকে। (১) মিতক্ষরা মতবাদ (২) দায়ভাগ মতবাদ ।
(ঘ) প্রথা : ইহা এমন রীতি যা দেশ, অঞ্চল বা মহল্লায় প্রচলিত থাকাকালে আইনের যোগ্যতা অর্জন করেছে। আদালত কর্তৃক হিন্দু প্রথাকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। যথা-(১) স্থানীয় প্রথা (২) শ্রেণী প্রথা (৩) পারিবারিক প্রথা।
হিন্দু আইনের আধুনিক উৎসসমূহ :
(ক) আদালতের সিদ্ধান্ত বা নজির
(খ) বিধিবদ্ধ আইন
(গ) সুবিচার, ন্যায়পরায়ণতা।
হিন্দু আইনে উত্তরাধিকার :
দায়ভাগ মতে তিন শ্রেণীর উত্তরাধিকারী ক্রমান্বয়ে মৃতের উত্তরাধিকারীর উপযুক্ত । যথা -(ক) সপিণ্ড, (খ) সকুল্য (গ) সমানোদক
(ক) সপিণ্ড : পিতৃকুলের উর্ধ্বতন তিন পুরুষ ও মাতৃকুলের ঊর্ধ্বতন তিন পুরুষের মোট ৬ পুরুষসহ পুরুষ সপিণ্ডের সংখ্যা ৪৮ জন। এছাড়াও বিধবা স্ত্রী, কন্যা, মাতা, পিতামহী, প্রপিতামহীসহ ৫ জন নারী সপিণ্ড রয়েছে। সর্বমোট সপিণ্ডের সংখ্যা ৫৩ জন।
(খ) সকুল্যঃ প্রপিতামহের ঊর্ধ্বতন তিন পুরুষ সকুল্য নামে অভিহিত। শ্রাদ্ধের সময় সপিওদের পিণ্ডদানের পর যা অবশিষ্ট থাকে তা সকুল্যদের উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হয়। সপিণ্ডের অবর্তমানে সকুল্যগণ ক্রমান্বয়ে উত্তরাধিকারী হয়। সকুল্যের মোট সংখ্যা ৩৩ জন।
(গ) সমানোদক : সকুল্যের ঊর্ধ্বতন সাত পুরুষ সমানোদক নামে অভিহিত। মৃতের সপিণ্ড এবং সকুল্য উত্তরাধিকারীর অবর্তমানে সমানোদকগণ উত্তরাধিকারিত্ব লাভ করে। সমানোদকের অনুপস্থিতিতে মৃতের সম্পত্তিতে ধর্মীয় গুরু বা চেলাগণ উত্তরাধিকারিত্ব লাভ করে। উল্লিখিত সকল উত্তরাধিকারীর অবর্তমানে মৃতের সম্পত্তির যাবতীয় দায়দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করে। সমানোদকের সংখ্যা মোট ১৪৭ জন ।
বন্টনযোগ্য সম্পত্তি ও বন্টনের নিয়ম :
১) দায়ভাগ মতে কোন হিন্দু ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি, উত্তরাধিকার হিসাবে প্রাপ্ত সম্পদের আয় থেকে অর্জিত সম্পত্তি এবং নিজস্ব প্রায় থেকে উপার্জিত সম্পত্তি, যা তিনি মৃত্যুকালে অবশিষ্ট রেখে গেছেন তা উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বন্টনযোগ্য।
২) দায়ভাগ মতে কোন হিন্দু জীবদ্দশায় স্বোপার্জিত এবং উত্তরাধিকার সূত্রে সমুদয় সম্পত্তি বা অংশবিশেষ হস্তান্তর করতে পারেন। সমুদয় সম্পত্তি, উইল করলেও বিধবা ভরণপোষণ পাওয়ার যোগ্য।
৩) সপিণ্ড, সকুল্য ও সমানোদকগণের মধ্যে ক্রমানুসারে সম্পদ বন্টনযোগ্য। ৪) অপুত্রক সৎ মাতা তার সৎ পুত্রগণের মধ্যে বাটোয়ারা দাবি করতে পারেন না।
৫) পুত্র/পুত্রগণ থাকলে তারাই সমুদয় সম্পত্তি পাবে। হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের বিধান অনুযায়ী নিকটবর্তী পুরুষ ওয়ারিশ থাকলে পরবর্তীরা সম্পত্তি পাবে না ।
৬) কোন নারী উত্তরাধিকারী সম্পত্তি প্রাপ্ত হলে তিনি জীবনস্বত্ব (সীমিত ভোগদখলের অধিকার) হিসেবে সম্পত্তি পাবেন। নারী উত্তরাধিকারী মারা গেলে সমুদয় সম্পত্তি মূল মৃত ব্যক্তির কাছে ফিরে যাবে। মূল মৃত ব্যক্তির পরবর্তী উত্তরাধিকারী সম্পত্তি পাবে। কোন পুরুষ উত্তরাধিকারী সম্পত্তি না পাওয়া পর্যন্ত এভাবে সম্পতি বারবার মূল মৃত ব্যক্তির কাছে ফিরে যাবে।
খ্রিস্টান উত্তরাধিকার আইন
খ্রিস্টান উত্তরাধিকার আইনের বিধান অনুসারে দুই প্রকার উত্তরাধিকার রয়েছে। যথা— সগোত্র ও সমগোত্র। সগোত্র ও সমগোত্র উভয় প্রকারের ঊর্ধ্বগামী ও নিম্নগামী বংশধরগণ কোন না কোন ডিগ্রীর অন্তর্ভুক্ত।
ক) সরাসরি সগ্রোত্র (Lineel consenguinity) : দুই ব্যক্তি যদি এমনভাবে স্পর্কিত হয় যে, একজন সরাসরি অন্যজন হতে জাত তাকে সরাসরি বা লিলিয়ান কনস্যানউনিটি বলে। কোন ব্যক্তি পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ তার ঊর্ধ্বগামী সগোত্র এবং পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র তার নিম্নগামী সগোত্র।
খ) সমগোত্র (Coleteral consenguinity) ঃ যদি দুই জন ব্যক্তি কোন পূর্বপুরুষ হতে আগত হয়, কিন্তু তাদের মধ্যে একজন অন্যজন হতে সরাসরি জাত নয় তবে তাদের ২ জনকে সমগোত্র বলা হয়।
গ) ডিগ্রী : কোন ব্যক্তির পিতা ও পুত্র তার সাথে প্রথম ডিগ্রীর সম্পর্ক দ্বারা যুক্ত তার পিতামহ ও পৌত্র উক্ত ব্যক্তির সংগে দ্বিতীয় ডিগ্রীর দ্বারা যুক্ত। তার প্রপিতামহ (পিতার পিতার পিতা) ও প্রপৌত্র (পুত্রের পুত্রের পুত্র) এর সংগে তৃতীয় ডিগ্রী দ্বারা সংযুক্ত।
সমগ্রোত্রের কোন ব্যক্তির সংগে মৃত ব্যক্তির আত্মীয়তার ডিগ্রী গণনা করতে হলে মৃত ব্যক্তি এবং উক্ত আত্মীয় এ দুজনের মধ্যে যিনি (কমন) সরাসরি সগোত্র তার মাধ্যমে ডিগ্রী গণনা করা হয়। মৃত ব্যক্তি হতে ঊর্ধ্বগামী সাধারণ (কমন) সরাসরি সগোত্রের ডিগ্রী গণনা করে আবার সেই সাধারণ (কমন) সরাসরি সগোত্র হতে নিম্নগামী আত্মীয়ের ডিগ্রী গণনা করা হয় ।
খ্রিস্টান উত্তরাধিকার আইনের মাধ্যমে সম্পদ বন্টনের সাধারণ নিয়ম :
১৯২৫ সালের ভারতীয় উত্তরাধিকার আইনের ৩৯২টি ধারার মধ্যে ২৪-৪৯ নং ধারা বাংলাদেশে বসবাসকারী ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান উভয় শ্রেণীর খ্রিস্টানদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে :
১) সম্পদ বন্টনের ক্ষেত্রে বর্ণিত ব্যক্তিদের কোন পার্থক্য নেই। তারা হলেন- মৃত ব্যক্তির পিতা ও মাতার মাধ্যমে সম্পর্কিত ব্যক্তিরা, পূর্ণরক্ত ও অর্ধরক্তের ব্যক্তিরা, জীবিত ব্যক্তি ও গর্ভস্থ সন্তান।
২) স্বামী/স্ত্রী – মৃতের অধস্তন সরাসরি কোন সগোত্র থাকলে স্ত্রী/স্বামী এক তৃতীয়াংশ পাবে। মৃতের অধস্তন সরাসরি না থাকলে কিন্তু অন্যান্য সমোর থাকলে স্বামী/স্ত্রী অর্ধাংশ পাবে। মৃতের কোন সমোত্র না থাকলে স্বামী/স্ত্র সম্পূর্ণ সম্পত্তি পাবে।
৩) মৃতের স্বামী/স্ত্রী না থাকলে সরাসরি সগোত্র বা সমগোত্রর মধ্যে সম্পদ বন্টন হবে। সগোত্র ও সমগোত্র কেউ না থাকলে সম্পদ সরকারের অনুকূলে যাবে।
৪) একই অবস্থানের নারী ও পুরুষ সমান সম্পদ পাবে।
উদাহরণ-১ঃ কোন ব্যক্তি ডেভিড এর ক, খ, গ নামে তিন সন্তান ছিল। তারা তিন জনই মারা গেছে। ডেভিড মারা যাবার কালে ক-এর ৪ জন সন্তান, খ-এর ২ জন সন্তান এবং গ এর ১ জন সন্তান ছিল। অর্থাৎ ডেভিড মারা যাবার কালে তার ৭ জন পৌত্র ছিল। তারা প্রত্যেকে সমান অংশে অর্থাৎ ১/৭ অংশ করে পাবে ।
বৌদ্ধ উত্তরাধিকার আইন
বাংলাদেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সাধারণত হিন্দু দায়ভাগ আইন অনুসরণ করে সম্পত্তি বন্টন করেন। কিন্তু চাকমা, ত্রিপুরা, দেওয়ান, খীসা, তঞ্চঙ্গা ইত্যাদি পদবির আদিবাসীরা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হলেও দায়ভাগ আইনের সংগে তাদের সামাজিক কিছু প্রথা অন্তর্ভুক্ত করে । প্রাচীন প্রথা ও নিয়মকানুনও তাদের উত্তরাধিকার নির্ধারণে ভূমিকা প্রাখে। তাদের সমাজ সাধারণত পুরুষ প্রধান। প্রাচীনকালের প্রথা বা সুদাম অনুসারে যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তির চিতায় আগুন দিত এবং পরদিন সকালে জল ঢেলে চিতার স্থান পরিষ্কার করে দেহাছি নদীর জলে বিসর্জন দিত তাকেই মৃত ব্যক্তির ত্যাজ্যবৃত্তের উত্তরাধিকার নির্ধারণ করা হতো। এ পদ্ধতি বর্তমানে চালু না থাকলেও রাজার অভিমত, বিভিন্ন বিচারের রায়, দান, উইল ইত্যাদি উত্তরাধিকার নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। উত্তরাধিকার নির্ধারণে নিম্নলিখিত পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ঃ
১। জাতীয় প্রথা বা ‘সুদাম’ অনুসারে মৃত ব্যক্তির ত্যাজ্য সম্পত্তিতে শুধু পুত্র সন্তান নেই উত্তরাধিকার হয়। একাধিক পুত্র সন্তান থাকলে সকলে সমান অংশে মালিক হবে। তবে কন্যাগণ ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারিণী।
২। মৃত ব্যক্তির একাধিক স্ত্রীর গর্ভজাত পুত্রের সংখ্যা যাহাই হউক না কেন, সকলে সমান অংশে উত্তরাধিকার হবে।
৩। পিতার মৃত্যুর পূর্বে কোন পুত্রের মৃত্যু হলে তার পুত্র সন্তানগণ দাদার সম্পত্তিতে পিতার প্রাপ্য অংশে অংশীদার হবে।
৪। পিতার জীবদ্দশায় কোন পুত্র পৃথক পরিবারে বসবাস করলেও পিতার মৃত্যুর পর তার প্রাপ্য অংশে অন্যান্য ভাইদের সঙ্গে সমপরিমাণে উত্তরাধিকার হবে।
৫। রুগ্ন, উন্মাদ, শারীরিক অক্ষম পুত্রও পৈত্রিক সম্পত্তির উত্তরাধিকার থাকবে।
৬ । জাতীয় প্রথা অনুসারে বিধবা স্ত্রী স্বামীর ত্যাজ্য বিত্তের কোন অংশ পায় না। তবে আজীবন তথা দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ না করা পর্যন্ত শুধু ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারিণী হয়। মৃত ব্যক্তি নিঃসন্তান হলে বা স্ত্রীগণ সমভাবে স্বামীর উত্তরাধিকার থাকবেন ।
৭। মৃত ব্যক্তির পুত্র সন্তান না থাকলে কন্যা বা কন্যাগণ পৈত্রিক সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারিত্ব লাভ করে।
৮। নিঃসন্তান অবস্থায় কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর কোন বৈধ সন্তান ভূমিষ্ট হলে সে সন্তান (পুত্র বা কন্যা যাই হউক) পৈত্রিক সম্পত্তির উত্তরাধিকার হয়। একাধিক স্ত্রীর একাধিক বা জমজ সন্তান হলে শুধু পুত্র সন্তান বা পুত্র সন্তানগণ পৈত্রিক সম্পত্তির উত্তরাধিকার হয়ে থাকে। শুধু এক বা একাধিক কন্যা সন্তান হলে সমঅংশে পৈত্রিক সম্পত্তির উত্তরাধিকারিণী হয়ে থাকে।
৯। মৃত ব্যক্তি অবিবাহিত হলে মৃতের সহোদর ভ্রাতা ত্যাজ্য বিত্তের উত্তরাধিকার হয়ে থাকে ।
১০। পিতা-মাতা, সহোদর ভাই না থাকলে অবিবাহিত মৃত ব্যক্তির যাবতীয় স্বত্বে তার সহোদর বোন উত্তরাধিকার হবে।
১১ । অবৈধ সন্তান উত্তরাধিকার হয় না ।
১২। ত্যাজ্য পুত্র পৈত্রিক সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার হয় না।
১৩। মৃত ব্যক্তি মহিলা হলে তার গর্ভজাত সন্তান উত্তরাধিকার হয় । পুত্র সন্তান না থাকলে কন্যা সন্তান ওয়ারিশ হয়।
১৪। চাকমা রাজপরিবারে সাধারণত রাজার জ্যেষ্ঠ পুত্রই রাজপদসহ যাবতীয় স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির উত্তরাধিকার হয়। কোন রাজা কন্যা সন্তান রেখে মারা গেলে তার গর্ভজাত জ্যেষ্ঠ পুত্র দৌহিত্রসূত্রে চাকমা রাজপদ পেয়ে থাকেন।





